জিলহজ্জের প্রথম দশক

জিলহজ্জের প্রথম দশক

জিলহজ্জ …

© যাইনাব আল-গাযী

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছে যে চারটি মাস সবচেয়ে বেশি প্রিয় তার মাঝে একটি হচ্ছে জিলহজ্জ মাস।এবং এই মাসের সবচেয়ে ফযিলতপূর্ন ও মর্যাদাপূর্ণ সময় গুলো হলো মাসের প্রথম দশক।

কুরআনের আলোকে এই দশকঃ

সুরাহ আল-ফাজরের প্রথম দুই আয়াত-

وَٱلْفَجْرِ ۞ وَلَيَالٍ عَشْرٍ ۞

শপথ ঊষার ۞ শপথ দশ রাতের ۞

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস সহ অধিকাংশ সাহাবী, তাবেয়ি ও মুফাসসিরগনের মতে এই দুই আয়াত দ্বারা জিলহজ্জে প্রথম দশকই বোঝানো হয়েছে।

সুরাহ আল-হাজ্জের ২৮ নং আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেন-

وَيَذْكُرُوا۟ ٱسْمَ ٱللَّهِ فِىٓ أَيَّامٍ مَّعْلُومَٰتٍ عَلَىٰ مَا رَزَقَهُم مِّنۢ بَهِيمَةِ ٱلْأَنْعَٰمِۖ

নির্দিষ্ট দিনসমূহে তারা যেন আল্লাহর নাম স্মরণ করে সেই সকল পশুর উপর,যা তিনি তাদের দিয়েছেন।

এখানে নির্দিষ্ট দিন বলতে প্রথম দশক বোঝানো হচ্ছে,এবং এই সময়ে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালাকে স্মরণ করতে অর্থাৎ উনার জিকির করতে বলা হয়েছে এবং উনি আমাদের যে সকল নিয়ামত অর্থাৎ রিজিক দিয়েছেন তার শোকর আদায় করতে বলেছেন।

কুরআনে এই দশকের বর্ণনায় আমরা বুঝতে পারি, এই দশক অবশ্যই ফযিলতপূর্ন ও আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয়।

হাদিসে আলোকে এই দশকঃ

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
‘আল্লাহর নিকট জিলহজ্জের দশ দিনের নেক আমলের চেয়ে অধিক প্রিয় অন্য কোনো আমল নেই।’
সাহাবীরা জিজ্ঞেস করলেন- ‘ ইয়া রাসুলুল্লাহ, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদও এরচেয়ে উত্তম নয়?’
রাসুলুল্লাহ বললেন- ‘ না,আল্লাহর রাস্তায় জিহাদও নয়।তবে সেই ব্যক্তির জিহাদ এরচেয়ে উত্তম,যে নিজের জানমাল নিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের জন্য বের হয়েছে,তারপর কোনো কিছুই নিয়ে ফিরে আসেনি।’ [বুখারি-৯৬৯]

আরেক হাদিসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
‘আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার নিকট জিলহজ্জের দশ দিবসের আমলের চেয়ে অধিক প্রিয় ও মহৎ অন্য কোনো দিনের আমল নেই,সুতরাং তোমরা সেই দিবসগুলোতে অধিক পরিমাণ তাসবিহ,তাহমিদ,তাহলিল,তাকবির জিকির করো।’ [আহমাদ-৫৪৪৬]

এই দশকের বিশেষ আমল-

  • সকল কাজের জন্য খালিস ভাবে নিয়ত করা,যেন আমাদের সাধারণ সব কাজগুলোও ইবাদাতে রূপ নেয়।
  • কুরবানি করতে ইচ্ছুক ব্যক্তি যেন চুল, দাড়ি, নখ, লোম, অবাঞ্ছিত লোম না কাটেন।
  • এক থেকে নয় তারিখ পর্যন্ত রোজা রাখা।
  • ৯ টি রোজা না রাখলেও আরাফার দিনে যেন অবশ্যই রোজা রাখা হয়। এই রোজার ফযিলত হচ্ছে পুর্বের ও পরের এক বছরের গুনাহ মাফ হয়ে যাবে ইন শা আল্লাহ। আরাফার দিন কবে এই নিয়ে ইখতিলাফে না যেয়ে উত্তম হলো ঈদের আগের দুইদিনই রোজা রাখা। তবে আরও উত্তম ৯টা রোজাই রাখা।তবে হাজিগন এই রোজা রাখবেন না।
  • বেশি করে কুরআন তিলাওয়াত করা।
  • তাওবা/ইস্তেগফার করা।
  • সর্বদা জিকির করা, বিশেষ করে তাসবিহ=সুবহানাল্লাহ, তাহমিদ=আলহামদুলিল্লাহ্‌, তাহলিল=লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, তাকবির-আল্লাহু আকবার জিকির করা।
  • তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করা।
  • দান-সাদকা করা।
  • বেশি বেশি করে বাবা মায়ের সেবা করা।
  • আত্মীয় ও প্রতিবেশীর খোঁজখবর নেয়া।
  • মাফ করে দেওয়া ও মাফ চেয়ে নেওয়া।
  • রোজাদারের আহারের ব্যবস্থা করা।
  • সবার সাথে উত্তম আখলাক প্রদর্শন করা।
  • গুনাহের কাজ থেকে নিজেকে ফিরিয়ে রাখা
  • বেশি করে দ্বীনের দাওয়াতের কাজ করা।
  • হজ্জ ফরজ হলে হজ্জ আদায় করতে যাওয়া
  • আরাফার দিন দুয়া করা। এই দিনের দুয়া ইন শা আল্লাহ কবুল হবে।
  • আরাফার দিন এই দুয়া অনেক বেশি করে পড়া –
    রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
    ‘শ্রেষ্ঠ দুয়া হচ্ছে আরাফাত দিবসের দুয়া। আর আমি এবং আমার পূর্ববর্তী নবীগণ যা বলেছি তার মধ্যে শ্রেষ্ঠ হচ্ছে:
    لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللّٰهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
    একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই, তাঁর কোনো শরীক নেই; রাজত্ব তাঁরই, সমস্ত প্রশংসাও তাঁর; আর তিনি সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান।
  • ৯ তারিখ ফজর থেকে ১৩ তারিখ আসর পর্যন্ত প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর পুরুষ-মহিলা প্রত্যেকের উপর তাকবিরে তাশরিক বলা ওয়াজিব।
    তাকবিরে তাশরিক-
    الله أكبر .. الله أكبر .. الله أكبر .. لا إله إلا الله
    الله أكبر .. الله أكبر .. الله أكبر .. ولله الحمد
    আল্লাহু আকবার.. আল্লাহু আকবার.. আল্লাহু আকবার.. লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ
    আল্লাহু আকবার.. আল্লাহু আকবার.. আল্লাহু আকবার.. ওয়া লিল্লাহিল হামদ।

ইত্যাদি যাবতীয় সকল ইবাদাত ও উত্তম এবং নেক কাজ করা। এই দিবসগুলো যেহেতু আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছে অধিক প্রিয়,তাই আশা করা যায় আমরা ইন শা আল্লাহ অনেক গুন বেশি সোওয়াব পাবো।

এই দশক আমাদের আমলনামা ভারি করার উত্তম এক সুযোগ, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা সবাইকে তৌফিক দিন এই নিয়ামত ভোগ করার। আমিন।

Leave a Reply